বিস্তারিত
শহীদ নগর
পৃষ্ঠা | প্রকাশনী | বাঁধাই |
২৬ | আল জারিফ | পিন আপ |
গ্রামের নাম শহীদ নগর। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এই অঞ্চলে আব্দুল মান্নান নামে এক মুক্তিযুদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন। স্কুলের পাশেই রেললাইন।সমান্তরাল লাইনগুলো সভ্যতাকে কাঁধে নিয়ে চির অপূর্ব প্রেমাস্পদের মতো বয়ে চলেছে সার্ধশতবর্ষ ধরে। প্রশস্ত মাঠের নরম সবুজ ঘাসেরা পরস্পরের সাথে নিবিড় বন্ধনে বদ্ধ হয়ে আছে। ঘাসমাতার সন্তানদের সাথে যেন শিক্ষার্থীদের গভীর মিতালী।
আমাদের একজন জামাল উদ্দিন স্যার ছিলেন। সহাস্য, সদালাপী কিন্তু কড়া মেজাজের প্রধান শিক্ষক। তিনি এখন ক্লাসে। আজ বেপারী কালাম স্যার এখনো স্কুলে আসেন নি। তাই ইংরেজি ক্লাস নিবেন তিনি। আজ পড়াচ্ছেন আর্টিকেল। ইংরেজ গ্রামারিয়ানরা কিছুটা পাগলা কিসিমের। এরা কলমের আগে a বসায়, কিন্তু হাতির আগে বসায় an. a elephant বললে ক্ষতি কী সেটা অজানা।
বাইরে বসন্তের ছোঁয়া। কুঁড়িবিলের উদ্ভাসিত পবন এসে ধুয়ে যাচ্ছে ক্লাস। স্যার স্বভাবজাত ভঙ্গিতে ক্লাস নিচ্ছেন।
আমাদের একজন বাবু স্যার ছিলেন। সনাতন ধর্মের বলে এই নাম। আসল নাম বাদল চন্দ্র দাস। এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা সারা স্কুল জীবনে স্যারের আসল নাম জানে না। আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় এই শিক্ষককে নিয়ে গর্বিত থাকি আমরা। জান্নাত জাহান্নামের কথা শুনলে খুব খারাপ লাগতো। যখন শুনতাম, জান্নাতে আমাদের একজন বাবু স্যারের দেখা যদি না পাই, খুব খারাপ লাগবে। তখন ৮ম শ্রেণির ছাত্র।
আমাদের ভয়ের বিষয়ের নাম গনিত। আর যিনি এই ক্লাস নেন, তাকেও ভয়। শান্ত মানুষ। মারেন, তবে কম। কিন্তু কথাগুলো মনে হয় অন্তরাত্মা ভেদ করে চলে যায়। আমরাও মানি। শ্রদ্ধা ও ভাললাগা কাজ করে। মনে হয়, এমন একজন শিক্ষক হওয়া আসলেই গৌরবের।
একবার তিনি আমাকে বললেন, আফজাল ৮ম শ্রেণি থেকে পানির জগটা নিয়ে আসো। আমি গেলাম। খালি জগ নিয়ে আসলাম। তিনি বললেন, পানির উৎসের কাছ থেকে খালি পানি পাত্র আনতে হয় না। আমি এর পর কোনদিন আর খালি পাত্র আনি নাই। পানির উৎসের কাছ থেকে।
আমাদের একজন লং কালাম স্যার ছিলেন। অনেক লম্বা ও কয়েকজন আবুল কালাম থাকার জন্য এই নাম। অমায়িক, স্বভাবসুলভ সরলতা ওনাকে অনন্য করেছিলো। তিনি সামাজিক বিজ্ঞান টাইপের বিষয়গুলো পড়াতেন। তাবলীগ জামাতে তখন ভাগ ছিল না। তিনি ছিলেন তাবলীগের কর্মী। অনেক অনেক শিক্ষামূলক গল্প দিয়ে আমাদের জীবনকে আজো সাজিয়ে রেখেছেন স্বর্নালী সম্ভারে। তার বক্তব্যের মূলকথা ছিলো, মানবিক হও, দুর্বলের পাশে দাঁড়াও।
আমাদের একজন নূর আহমদ স্যার ছিলেন। শান্ত ও স্বভাবসুলভ সরলতা বৈশিষ্ট্য ছিলো তারও। মাঝে মাঝে কড়া শাসন করতেন। আবার হেসে উঠতেন। আমরা বুঝলাম, শিক্ষার্থীরা একচেটিয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস পছন্দ করে না। logical ও illogical ব্রেইন ব্যবহার করে পড়ানো গেলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখা যায়। আজকাল এই ব্যপারটা আমি জানি। বাস্তবিকভাবেই এটা সত্য। ইউরোপে এভাবেই পড়ানো হয়।
আমাদের সোহরাব আলী স্যার ছিলেন। ফিজিক্যাল স্যার। স্পোর্টস এর আগে অ্যাসেম্বলিতে বলতেন, দল, জায়গায় দাঁড়িয়ে তালে তালে পা রাখবে, তালে, তাল!
তখনি দুজন ঢোল বাদক একইসাথে ঢং করে বাড়ি দিতো। এভাবে বিভিন্ন ক্রীড়াশৈলীতে সারা মাঠ প্রদক্ষিন করতো। বাঁশিতে সজোরে ফুঁ দিয়ে কাটতো ক্রীড়াদিবস। বাংলা ব্যকরনের কারক ও বিভক্তি পড়াতেন চমৎকার করে। স্কুলের অতীত ইতিহাস। অতীত বর্তমান উঠে আসতো তাঁর কথায়। স্যার এখনো আছেন। আছে তারুণ্য। ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়ের এই শিক্ষক নিজেও এক জীবন্ত ঐতিহ্য।
শাহাব উদ্দিন ঢালী স্যার। তিনি বিজ্ঞান পড়াতেন। গনিত পড়াতেন। খুব শান্ত স্বরে কথা বলতেন। আমরা মনোযোগী ছাত্রের মতো শুনতাম তাঁর কথা। একবার তিনি চোখের পলকে ব্ল্যাকবো....